রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০০৯

গল্প#২

খাওয়া-দাওয়া নিয়ে দুটো গল্প

ভূমিকাঃ এই গল্প গুলো আমার নিজের আইডিয়ার না, সংগৃহীত বলতে পারেন, আর ঈষৎ মডিফায়েড। রঙ চড়ানো বলা যেতে পারে অনায়াসে।
১। ঢেউ গুনা
জন দরদী রাজামশাই বিস্বস্ত গোয়েন্দা মারফত খবর পেলেন প্রধান উজিরে আজম লোকটা মহা দুই নম্বর। দুই নম্বর মানে, সেই লোক সবখানে ট্যাক্স বসিয়ে প্রজাদের কাছ থেকে যথেষ্ট পরিমান টাকা আদায় করছে কিন্তু রাজ কোষাগারে তা জমা দিচ্ছে না। সোজা বাংলায় উৎকোচ নিচ্ছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে। রাজা আরও কিছু জায়গায় খোজ নিলেন তার চারিত্রিক সনদ সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হবার জন্য, এবং যা শুনলেন, তাতে তার ব্রক্ষতালু জ্বলে গির গির করতে থাকলো। রানীমাতা দিব্যি দিয়ে সখীদের বললেন, তিনি ইহ জনমে রাজাকে এত রাগতে দেখননি।
তবে আশার কথা হল, রাজা মশাইয়ের ম্যানেজমেন্টের উপরে উচ্চ ডিগ্রী ছিল। তাও আবার নর্থ আমেরিকার হাইফাই ইউনি থেকে। তাই এই বিপদেও রাজা মশাই তার মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলেন। তিনি উজিরে আজমকে শাহী বৈঠক খানায় তলব করলেন, ঘটনার মর্ম উদ্ধারের জন্য। উজিরে আজম যা বললেন তাতে রাজা কিছুক্ষন তব্দা খেয়ে বসে থাকলেন। কারন উজিরে আজম সবখানে ট্যাক্স বসিয়ে রেখেছেন, লোকজন রাতে ঘুমালে ট্যাক্স দিতে হবে, না ঘুমিয়ে জেগে থাকলেও ট্যাক্স দিতে হয়। দুটোর পিছনে যুক্তি গুলোও একবারে ফেলনা নয়। রাজা মশাইয়ের সংগে দেখা করতে গেলে এক ধরনের ট্যাক্স, দেখা না করলে আরেক ধরনের ট্যাক্স, জুতা পরে রাস্তায় হাটলে এক ধরনের ট্যাক্স খালি পায়ে হাটলেও ট্যাক্স। রাজার কাছে সবচেয়ে ইফেক্টিভ মনে হল শ্বাস নেয়ার ব্যাপারটা, প্রজা শ্বাস নিচ্ছে, মানে বায়ু সেবন, যেটা আসলে রাস্ট্রীয় সম্পত্তি, ভোগ করলে ট্যাক্স দিতে হবে, আর যিনি শ্বাস নিচ্ছেন না, তিনি তার জন্য বরাদ্দ বাতাস গ্রহন না করে বায়ু মন্ডলে চাপ সৃষ্টি করেছেন, যা কিনা রাস্ট্রীয় ক্ষতি, তাই তারও ট্যাক্স।
রাজা দুইদিন খুব করে ভাবলেন, কি থেকে কি করা যায়, উজিরে আজমের সম্মান হানি না করে তাকে সরিয়ে দিতে হবে রাজকার্য থেকে। কারন ম্যানেজমেন্টের বেসিক সূত্র অনুসারে তিনি কাউকে অসম্মান করতে পারেন না। তাই অনেক ভেবে ভেবে, রানীমাতার সংগে পরামর্শ করে রাজা উজিরে আজম কে নদী ঘাটে ঢেউ গুনার দায়িত্ব দিলেন। রাজা তাকে বুঝালেন, ঢেউ গুলো রাস্ট্রীয় সম্পত্তি, কিন্তু এর কোন শুমারী নেই, এর শুমারী হওয়া উচিৎ, এবং এর জন্য উজিরে আজমের চেয়ে যোগ্য আর কেউ নেই দেশে, বিদেশ থেকে কনসালটেন্ট আনা যাতে পারে, কিন্তু দেশের মেধাকে কাজে লাগানোর ব্যাপারেই রাজা মশাই বেশি উৎসাহী।
উজিরে আজম এই কাজে সম্মানিত বোধ করলেন, দেশের পেপার পত্রিকায় তার মেধা নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হল, টিভি তে সুন্দরী তরুনীরা টক শো দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ভরিয়ে তুললেন। এরপর শুভ এক দিনক্ষন ঠিক করে মহা ধুমধাম করে শুমারীর উদ্বোধন করলেন রাজা মশাই, বেলুন উড়লো, নর্তকী নাচলো, গায়িকা গাইলো, লেজার ডিসপ্লে হল, উজির মশাই নদীর ঘাটে টং টাঙ্গিয়ে ঢেউ গুনা শুরু করলেন। ছোট ঢেঊ, মাঝারী ঢেউ আর বড় ঢেউ। সারাদিন শাহী গরগরায় তামুক টানেন আর ঢেউ গুনেন, সন্ধ্যার আগে আগে রাজাকে আপডেট করেন। রাজা সংখ্যা শুনে মাথা নাড়েন আর পিছন ফিরে মুচকি হাসেন, “খা ব্যাটা এখন, ঘুস খা”।
এক বছর পরে রাজা শুমারীর সমাপ্তি ঘোষনা করলেন, আশা এর মধ্যে উজিরে আজমের বদ গুনটা হয়তো চলে গিয়েছি। এর পরে রাজা এবং উজিরে আজম রুদ্ধদ্বার গোল টেবিলে বসলেন, ঢেউ এর গড়-সংখ্যা বের করার জন্য। আর টুকটাক গল্প-খানাপিনা।
-উজিরে আলা, কাজ কেমন হয়েছে?
-ভালো হুজুর, তবে বড় ঢেউ সংখ্যায় কম হয়েছে, নৌকার সংখ্যা বাড়ানো দরকার।
- নৌকার সংগে ঢেউ এসেছে কিভাবে?
-হুজুর বড় নৌকা নদী দিয়ে গেলে বড় ঢেউ হয়, ছোট নৌকা গেলে ছোট ঢেউ।
রাজার মুগ্ধতা বাড়ে, উজিরে আজমের দৃষ্টি বড় সূক্ষ।
- উজিরে আলা, ঢেউ বড় ছোট সমস্যা না, সমস্যা হচ্ছে ঢেউ এর সংখ্যা।
- হুজুর ঠিকই বলেছেন, তবে ছোট ঢেউ এ পরতা পরে কম।
- কিভাবে?
- হুজুর আমি দেখলাম ঢেউ উঠে দুই কারনে, এক বাতাস, দুই নৌকা। বাতাস তো রাস্ট্রীয় সম্পত্তি, রাস্ট্র যখন নিজেই সম্পত্তি ভোগ করে তখন ট্যাক্স না দিলেও চলে, কিন্তু নৌকা হচ্ছে ব্যক্তি মালিকানা, তাই নৌকার কারনে উৎপন্ন ঢেউয়ে আমি ট্যাক্স বসিয়ে দিয়েছি। এইখানে দুইটা ভ্যারিয়েবল ফিক্স করেছি, একটা ঢেউ এর সংখ্যা, আর অন্যটা ঢেউ এর সাইজ। এর উপরে ভিত্তি করে সাতটার মত ক্যাটাগরী করেছি। এর পর রাজ কর্মচারীকে সমন দিয়ে দিয়েছি, আমার টং এর সামনে দিয়ে পার হবার সময় যে যে ক্যাটাগরীতে পরবে, তাকে সেই পরিমান ট্যাক্স দিতে হবে।
২। চেটে খাওয়া
বাসার কাজের লোক নিয়ে গৃহকর্তা মহা বিপদে পড়েছেন। বাজারে পাঠিয়ে শান্তি নেই মোটেও। যত বেশি বা কম টাকা দিয়েই তাকে পাঠান না কেন, সে কিছু না কিছু টাকা মারবেই মারবে। বিরক্তির চরম। আর এমন গোবেচারা ভান করে থাকে, বকতেও কর্তার খুব মায়া লাগে। “এস্পার ওস্পার এবার একটা করেই ছাড়বো”, এই সিন্ধান্ত নিয়ে একদিন তিনি ছোড়াকে ডেকে পাঠালেন।
-তুই সব সময় টাকা মারিস?
-জ্বে সার, কিছু মারি।
-সবসময় মারিস?
- জ্বে সার, সবসময়।
-সবসময় !?
-সার পুরান অভ্যাস, মারতে না চাইলেও মারা হই যায় কেমনে কেমনে জানি।
গৃহকর্তার মেজাজ বিগড়ে গেল। তিনি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিলেন, “আমি একে টাকা মারতে দিব না”। তিনি পকেট থেকে দশটাকার নোট বের করে সামনের দোকান থেকে পাচটা সিংগাড়া আনতে বললেন। গৃহকর্তা নিশ্চিন্ত, এবার সে কোন কিছুই মারতে পারবে না, কারন দশ টাকায় পাচটা সিংগাড়াই পাওয়া যাবে, তিনি জানেন।
ছোড়া কিছুক্ষনের মধ্যেই সিংগাড়া নিয়ে আসলো। তিনি খুব আগ্রহ ভরে প্যাকেট খুললেন, ভেবেছিলেন কম থাকবে এক-দুটো। কিন্তু না, সিংগাড়া পাচটাই আছে।
- কই এইবার তো কিছু মারতে পারলি না, পাচটা সিংগাড়াই এনেছিস।
- সার এইবারও কিছু চুরি করছি। ভ্যাবলা উত্তর দেয়।
- আরে কিভাবে, পাচটাই তো আছে।
- হুজুর সিংগাড়া গুলা একটু হাত দিয়া নাইড়া দেখন তো ভিজা ভিজা লাগে নাকি?
গৃহকর্তা হাত দিয়ে নাড়েন, এর পরে জিজ্ঞাসু নয়নে তাকিয়ে বলেন, “হুম ভিজা ভিজা লাগে, ঠান্ডা সিংগাড়া”।
- চাটছি হুজুর, চাটছি, এইবার চাইটা খাইছি শুধু, তাই ঠান্ডা আর ভিজা ভিজা লাগে। ভ্যাবলা উত্তর দেয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন